ইতালি প্রবাসী শ্রমিক
মো: আবুল কালাম, ইতালি প্রবাসী, কাজ করেন ছোট একটা গার্মেন্টেসে সুইং অপারেটর হিসেবে । ছিলেন বাড়ির কেয়ার-টেকার, ফার্নিচার দোকানের কর্মী । ভাগ্য বদলের লক্ষ্যে সৌদীতে গিয়ে প্রতারিত হয়ে দেশে ফিরে আসেন। তবু দমে যাননি । জীবন পাল্টfতে আবুল কালাম আবার গেলেন ইতালি। এখন সেখানে তিনি ভালো আছেন। এই রেমিটেন্স যোদ্ধার জীবনের উত্থান-পতনের গল্প উঠে এসেছে এই সাক্ষাৎকারে। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন প্রবাসন নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার মোঃ জাকির হোসেন পাটওয়ারী।
মোঃ জাকির হোসেন পাটওয়ারী: প্রথমেই আপনাকে প্রবাসন নিউজ এর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আপনার নিজের পরিচয়টি বলুন ?
মো: আবুল কালাম: আমার বাড়ি চাঁদপুর জেলার, উত্তর মতলব থানায়। আমার বৃদ্ধ বাবা,মা, স্ত্রী ও দুই পুত্র সন্তান বাংলাদেশে থাকে।
মোঃ জাকির হোসেন পাটওয়ারী: পড়াশোনা করেছেন ?
মো: আবুল কালাম: জি, আমি এসএসসি পাস করেছি।
মোঃ জাকির হোসেন পাটওয়ারী: বাংলাদেশে থাকতে আপনি কি কাজ করেছেন ?
মো: আবুল কালাম: আমরা গরিব ঘরের সন্তান, তাই আমাদের ছোটবেলা থেকে অনেক ধরনের কাজ করতে হয়েছে।মহাখালীর একটি বাড়ির কেয়ারটেকার হিসেবে তিন চার বছর কাজ করেছি, বেশি টাকার আশায় ওই চাকরি ছেড়ে অন্য কাজ খুঁজতে থাকি। কিন্তু তখনই বিপদে পড়লাম। কারণ যেখানেই কাজ করতে যাই, সেখানেই জিজ্ঞাসা করে অভিজ্ঞতা আছে কি না। যেহেতু আমি কেয়ারটেকার হিসেবে ছিলাম তাই কোন কাজের দক্ষতা অর্জন করতে পারিনি।
অবশেষে পরিচিত এক বড় ভাইয়ের পরামর্শে ফার্নিচার দোকানে কাজ পেলাম এবং সেখান থেকেই ফার্নিচার প্রস্তুত এবং বিক্রির কৌশলটি শিখলাম। এক সময় ফার্নিচার কাজের উপর দক্ষতা নিয়ে ফ্রী ভিসায় সৌদি আরব গেলাম।
কিন্তু সেখানে মালিক যেই কাজ পাওয়ার কথা ছিল সেই কাজ না পেয়ে সৌদিতে চার মাস থাকার পর, যাওয়া আসার টাকা লস দিয়ে আবার ঢাকায় এসে লোকাল বাসে হকারী করতে শুরু করি। একেক সময় একেক প্রোডাক্ট বিক্রি করতাম; যেমন টুথব্রাশ, মানিব্যাগ ও রান্না বান্নার কাজে ব্যবহৃত ছোট ছোট বিভিন্ন জিনিস। কিন্তু এভাবে আমার কোন কিছুতেই অভাব দূর হচ্ছিলো না, তাই আবারও দেশের বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা করি এবং এক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যকে মন থেকে বাদ দিয়ে ইউরোপের যে কোনো দেশে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা শুরু করি।
মোঃ জাকির হোসেন পাটওয়ারী: আপনি কত সালে ইতালি গিয়েছেন ?
মো: আবুল কালাম: ২০২২ সালে।
মোঃ জাকির হোসেন পাটওয়ারী: কোন কাজে গিয়েছেন এবং সেই কাজের উপর কোন ট্রেনিং নিয়ে গিয়েছিলেন কি ?
মো: আবুল কালাম: আমি ইতালির একটি ছোট্ট গার্মেন্টস কারখানায় কাজ করছি সুইং অপারেটর হিসেবে এবং এই কাজের উপর ৬ মাসের একটি কোর্স করেছি, ঢাকার মালিবাগে ছোট পরিসরের একটি ট্রেনিং সেন্টার থেকে।
মোঃ জাকির হোসেন পাটওয়ারী: ইতালি যাওয়ার পর ভাষাগত কোন সমস্যায় পড়েছেন কি ?
মো: আবুল কালাম: অবশ্যই পড়েছি প্রথম থেকেই, এখন বুঝতে পেরেছি, বাংলা ইংরেজী ছাড়াও আরো দুটো ভাষার (ফ্রেন্স ও চাইনিজ) উপর পূর্ণ দক্ষতা নিয়ে আসলে অনেক বেতন পেতাম। আমি আপনার মাধ্যমে সকলকে জানাতে চাই বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ বা যে কোনো দেশের যাওয়ার আগে তিন থেকে পাঁচ মাসের নির্দিষ্ট কাজের ট্রেনিংয়ের পাশাপাশি কমপক্ষে দুইটি ভাষা জেনে আসলে বেতন দ্বিগুণের চেয়েও বেশি পাওয়া যায় ।
মোঃ জাকির হোসেন পাটওয়ারী: আপনার এই গার্মেন্টসে কোন কোন দেশের লোকজন কাজ করে ?
মো: আবুল কালাম: বাংলাদেশীই বেশি, তারপর ইন্ডিয়ান তিন জন, পাকিস্তানি একজন।
মোঃ জাকির হোসেন পাটওয়ারী: বাংলাদেশিরা বেশি কেন এবং অন্যান্য দেশের লোকজন কম কেন ?
মো: আবুল কালাম: ইন্ডিয়ানরা এই কাজ কম করে, কারণ এখানে তারা অন্য সেক্টরে কাজ করে। যেমন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শোরুম, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের লাইব্রেরী, সিকিউরিটি, কুরিয়ার ও কম্পিউটারে ডাটা এন্ট্রির (এসএসসি পাস হলেই করতে পরে) কাজ করে। অল্প পরিশ্রমে বেশি ইনকাম করার টার্গেট থাকে বেশি। এই কারণে তারা আসার আগেই মিনিমাম ২ টা ভাষা শিখে আসে। যার জন্য তারা বেশিরভাগ লোকের সাথে মিশতে পারে এবং বেতনও বেশি আদায় করে নিতে পারে।
মোঃ জাকির হোসেন পাটওয়ারী: এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে গিয়ে কি ধরনের সমস্যায় পড়েছেন?
মো: আবুল কালাম: আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের এখানে কাজ করতে কোন সমস্যা হচ্ছে না। আমরা বাঙালিরা আসলেই খুব ভালো আছি। তারা সময় মতই বেতন দিচ্ছে । আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি।
স্যার একটা কথা বলি, আপনি কিছু না মনে করলে একটা কথা শেয়ার করি ?
মোঃ জাকির হোসেন পাটওয়ারী: জি বলুন
মো: আবুল কালাম: স্যার ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে বড় বড় নেতারা আসছেন, উনারা ইতালি এসে মিটিংয়ে বলে গেছে আমাদের দেশে নাকি এখন আর কোনো গরিব নাই, আমরা এখন গরীব দেশ না।এই কথা বলার পর মালিকপক্ষ আমাদের সাথে একটু নেগেটিভ আচরণ করে।মাঝে এমনও হয়েছে, তারা বলে তোমরা ধনী দেশ হলে আমাদের এখানে কেন কাজ করতে এসেছো ? এই জিনিসগুলো আমাদের এখানকার অভিবাসীদের মনে প্রচন্ড নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
মোঃ জাকির হোসেন পাটওয়ারী: ইতালিতে কাজের ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলাকে কি আলাদা করে দেখা হয়?
মো: আবুল কালাম: এই দেশে পুরুষ ও মহিলাকে একইভাবে দেখা হয়, তবে মহিলারা তেমন বেশি এই কাজে (সুইং অপারেটর) থাকে না। তারা আরো উন্নত মানের কাজ করে । কিছু ইটালিয়ান (পুরুষ) আছে আমাদের সাথে কাজ করে।
মোঃ জাকির হোসেন পাটওয়ারী: একজন প্রবাসী অভিবাসন কর্মী হিসেবে কি সুবিধা পাচ্ছেন ?
মো: আবুল কালাম: আসলে এখানে অভিবাসন কর্মী হিসেবে সবার জন্য একই রকম। তবে যারা দক্ষ এবং অভিজ্ঞ তাদেরকে সব সময় আলাদাভাবে মালিকরা দেখে।
আরেকটি ব্যাপার হলো পূর্বের মতো সরকারি আমলা ও মন্ত্রীরা এই দেশে এসে যেন না বলে যে বাংলাদেশ এখন আর গরিব দেশ নয়, আমরা ১০০% স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি দেশ। আমরা একটি উন্নয়নশীল দেশ এটা বললেই যথেষ্ট।
মো: আবুল কালাম: স্যার আপনাকে কি একটি প্রশ্ন করতে পারি?
মোঃ জাকির হোসেন পাটওয়ারী: জি বলুন
মো: আবুল কালাম: আমরা প্রবাসী অভিবাসন কর্মীদের পক্ষ থেকে আপনার মাধ্যমে বর্তমান অন্তবর্তী কালীন সরকারকে জানাতে চাই, আমাদের এখানে যে আইডি কার্ড আছে তার উপর ভিত্তি করে প্রবাসীদের জন্য যেনো লোনের ব্যবস্থা করা হয় বাংলাদেশে। আমরা অনেক টাকা খরচ করে বিদেশে এসেছি এবং পূর্বের আরো কিছু লোন আছে।
আমরা সুন্দরভাবে বিদেশ থেকে লোন পরিশোধ করতে পারব এবং এটি ব্যাংকের মাধ্যমে করা যাবে। সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশে থাকা অবস্থায় আয়ের কোন উৎস ছিল না । দুই মাস ইনকাম করলে ৬ মাস বসে থাকতে হতো, কিন্তু এই দেশে কাজের অভাব নাই। আমরা আপনাদের দোয়ায় ভালো টাকা আয় করছি, সেজন্য এই অনুরোধ করা।এটি বাংলাদেশে চালু করা হলে এর সুফল পরবর্তীতে যারা আসবে তারাও ধারাবাহিকভাবে পাবে।
মোঃ জাকির হোসেন পাটওয়ারী: আপনার সাথে অনেকক্ষণ কথা বললাম, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের প্রবাসন নিউজকে সময় দেওয়ার জন্য।
মো: আবুল কালাম: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের সুখ-দুঃখের কথাগুলি তুলে ধরার জন্য।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
খোকন দাস
সম্পাদক মন্ডলি
সৈয়দা পারভীন আক্তার
ফকরুদ্দীন কবীর আতিক
মোঃ ইলিয়াস হোসেন
মোঃ শাহাদাত হোসেন
পরিচালক মন্ডলি
ছিদ্দিকুর রহমান ভুঞ্রা (পরিচালক, ফিন্যান্স)
মোস্তাফিজুর রহমান (পরিচালক, পাবলিকেশন)
শান্ত দেব সাহা (পরিচালক, এইচ আর)
শাহরিয়ার হোসেন (পরিচালক, মার্কেটিং)
বার্তা সম্পাদক
মোঃ হাবীবুল্লাহ্
সিনিয়র রিপোর্টার
মোঃ জাকির হোসেন পাটওয়ারী
ভারপ্রাপ্ত প্রকাশক, আরিফুর রহমান কর্তৃক
ডা. নওয়াব আলী টাওয়ার, ২৪ পুরানা পল্টন, ঢাকা থেকে প্রকাশিত।
ফোনঃ +৮৮ ০১৭৩২ ৪১৭ ৫১৭
Email: [email protected]
©২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || ProbasonNews.com