ফাইল ছবি
অন্তর্বর্তী সরকারের একশ দিনে বিগত সরকারের রেখে যাওয়া লণ্ডভণ্ড অর্থনীতি সবল অবস্থানে এসেছে বলে দাবি করেছেন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। লণ্ডনের বিখ্যাত দ্য ইকোনোমিস্ট ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কথারই প্রতিধ্বনি করা হয়েছে। ‘আফটার দ্য রেভ্যুলেশন বাংলাদেশ ইজ স্টাবল, ফর দ্য মোমেন্ট’ শিরোনামে ওই প্রতিবেদনে বলা হয় অর্থনীতি আর অবাধে পতনের মুখে নেই। এই ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রেখেছে রেমিট্যান্স। জাতীয় প্রবৃদ্ধির ৫ ভাগই হচ্ছে রেমিট্যান্স।
এদিকে সরকারের তিন মাস পূর্তি উপলক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এর পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকারের তিন মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই তিন মাসে মোট ২২২৮২১ বাংলাদেশী শ্রমিক বিদেশে গেছে।
রেবাবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা যখন কাজ শুরু করেছি, দেশের অর্থনীতি ছিল বিপর্যস্থ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে। আশার কথা, এই রিজার্ভ পরিস্থিতি এখন উন্নতির পথে। গত তিন মাসে রিজার্ভে কোনো রকম হাত না দিয়েই আমরা প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ শোধ করতে পেরেছি। জ্বালানি তেল আমদানিতে পুঞ্জীভূত বকেয়ার পরিমাণ ৪৭৮ মিলিয়ন ডলার হতে কমিয়ে ১৬০ মিলিয়ন ডলারে আনতে পেরেছি। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ-সহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা ইতোমধ্যে ঋণ ও অনুদান হিসেবে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা আমাদের ভঙ্গুর অর্থনীতিকে সচল করতে সক্ষম হবে।’
জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, ‘বলা বাহুল্য এখনো আমাদের বন্ধুদের কাছ থেকে যে সাহায্যের আয়োজন হয়েছে তা আসা শুরু করেনি। বন্ধু রাষ্ট্রগুলি শুধু যে আমাদের বড় বড় অংকের সাহায্য নিয়ে আসছে তাই নয়, তারা এই সাহায্য দ্রুততম সময়ে আসা শুরু করবে এই প্রতিশ্রুতিও আমাকে দিয়েছে। এই সাহায্য আসা শুরু করলে আমাদের অর্থনীতি অত্যন্ত মজবুত এবং আকর্ষণীয় অর্থনীতিতে পরিণত হবে। বিদেশী বিনিয়োগকারীরাও নানা রকম বিনিয়োগে উৎসাহীত হয়ে এগিয়ে আসবে।’
তিনি বলেন, পতিত সরকার আমাদের জন্য যে ভঙ্গুর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি রেখে গিয়েছে তাতে রাজস্ব আদায়ে গতি আনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে। এর মধ্যেও জুলাইয়ের নেতিবাচক অবস্থা থেকে অক্টোবর নাগাদ রাজস্ব আদায়ে পৌনে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। আগের অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বিপুল রাজস্ব ঘাটতি ছিল। যে কারণে এবার শুরু থেকেই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অনেক বেড়ে যায়। এর ফলে স্বৈরাচার পতনের পরবর্তী তিন মাসে পৌনে ৯ শতাংশ রাজস্ব বৃদ্ধির পরও লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২৩ শতাংশের বেশি ঘাটতি থেকে যায়। রাজস্ব আদায়ে গতি আনতে আমি এখন অন লাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে উৎসাহিত করছি।
বাংলাদেশকে সাহায্যের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের আগ্রহের কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ইউএনডিপিসহ অন্যান্য সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে আমার দীর্ঘ বৈঠক হয়েছে। তারা বাংলাদেশকে নতুনভাবে এবং সর্বাত্মকভাবে সাহায্যের জন্য তাদের আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত বৈঠকে চীনের পক্ষ থেকে যাবতীয় সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।
বিনিয়োগ টানতে সরকারের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিনিয়োগকারিদের সঙ্গে এখন থেকে আমরা আলোচনা শুরু করে দিয়েছি। বিশ্বের রাষ্ট্রপুঞ্জের মজলিসে আমরা এখন সম্মানিত এবং প্রশংসিত দেশের অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছি। এর কারণে পরাজিত শক্তি নানা কৌশল করেও তাদের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারছে না। তারা নানা চেহারা নিয়ে আপনাদের প্রিয়পাত্র হবার চেষ্টা করছে। পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্র থেকে নিজেকে মুক্ত রাখুন, দেশকে মুক্ত রাখুন। এ ব্যাপারে অনড় থাকুন। এমন কিছু করবেন না যা তাদেরকে উৎসাহিত করতে সাহায্য করে। তাদেরকে সকল দিক থেকে নিরাশ করুন। সেটা নিশ্চিত করতে পারলে আমাদের আর কোন বিষয়ে সংশয় করার প্রয়োজন নেই। সরকারের পক্ষ থেকে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি সকল প্রকার সীমাবদ্ধতা সত্বেও আমরা আপনাদেরকে একটা মজবুত অর্থনীতি দিয়ে যাবো, ভবিষ্যতে চলার পথকে সহজগম্য করে যাবো, নাগরিক অধিকারসমূহ নিশ্চিত করে যাবো। বিপক্ষ শক্তি যত শক্তিশালীই হোক, নাশকতার যত রকমই উদ্ভট পরিকল্পনাই করুক-- সব কিছু নস্যাৎ করার জন্য প্রস্তু থাকুন। এবার যে মুক্তি আমরা অর্জন করেছি তা আমাদের কাছ থেকে কেউ যেন ছিনিয়ে নিতে না-পারে তার জন্য সর্বমুহূর্তে প্রস্তুত থাকুন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, পতিত সরকার ও তার দোসররা প্রতিবছর দেশ থেকে ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ সম্প্রতি এই তথ্য দিয়েছে। পাচার হয়ে যাওয়া এই অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য সম্ভব সকল ধরনের উদ্যোগ আমরা গ্রহণ করেছি। এ কাজে সফল হতে পারলে আমাদের অর্থনীতি আরো গতি পাবে। এ কাজে আমরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার সাহায্য নিচ্ছি।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
খোকন দাস
সম্পাদক মন্ডলি
সৈয়দা পারভীন আক্তার
ফকরুদ্দীন কবীর আতিক
মোঃ ইলিয়াস হোসেন
মোঃ শাহাদাত হোসেন
পরিচালক মন্ডলি
ছিদ্দিকুর রহমান ভুঞ্রা (পরিচালক, ফিন্যান্স)
মোস্তাফিজুর রহমান (পরিচালক, পাবলিকেশন)
শান্ত দেব সাহা (পরিচালক, এইচ আর)
শাহরিয়ার হোসেন (পরিচালক, মার্কেটিং)
বার্তা সম্পাদক
মোঃ হাবীবুল্লাহ্
সিনিয়র রিপোর্টার
মোঃ জাকির হোসেন পাটওয়ারী
ভারপ্রাপ্ত প্রকাশক, আরিফুর রহমান কর্তৃক
ডা. নওয়াব আলী টাওয়ার, ২৪ পুরানা পল্টন, ঢাকা থেকে প্রকাশিত।
ফোনঃ +৮৮ ০১৭৩২ ৪১৭ ৫১৭
Email: [email protected]
©২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || ProbasonNews.com