ফাইল ছবি
নারী অভিবাসীর সংখ্যা বাড়াতে হলে মধ্যপ্রাচ্য থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ইউরোপ ও উন্নত দেশের শ্রমবাজারের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে এবং সেই মার্কেটের উপযুক্ত করে মেয়েদের তৈরি করতে সরকারের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে মনে করছেন জনশক্তি রফতানি খাতের সংশ্লিষ্টরা।
বিএমইটির তথ্যে জানা গেছে বাংলাদেশ থেকে চলতি বছর সামগ্রিকভাবে জনশক্তি রফতানি বৃদ্ধি পেলেও নারী অভিবাসীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। নারীর সংখ্যা বিগত বছরের তুলনায় চলতি বছরে ২৮ শতাংশ কমেছে, অন্যদিকে নারী কর্মীদের প্রধান শ্রমবাজার সৌদি আরবেও নারী অভিবাসীর সংখ্যা কমেছে। দেশটিতে নারী কর্মী অভিবাসন কমেছে ৩৫ শতাংশ।
তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর এই নয় মাসে বিভিন্ন দেশে নারী কর্মী গেছে ৪৩,৪০৫ জন, বিগত বছরের এই সময়ে নারী কর্মী গেছে ৬০,৫৬৬ জন।
তথ্য মতে, চলতি বছরের নয় মাসে সৌদি আরবে নারী কর্মী গেছে ২৬.৮৩৪ জন, অথচ গত বছরের প্রথম নয় মাসে নারী কর্মী গেছে ৪১,৩২৭ জন।
চলতি অর্থবছরের জুলাই আগস্ট সেপ্টম্বরে জনশক্তি রফতানি হয়েছে যথাক্রমে ৭১৪৪১, ৫৩৪৬২, ৬৪৬৭৭; অন্যদিকে এই তিন মাসে নারী কর্মী গেছে যথাক্রমে ৪৯৪৬, ২৭৩৫, ৫৫৯৫ জন।
অন্যদিকে এই তিন মাসে সৌদি আরবে কর্মী গেছে যথাক্রমে ৪৭৮৬৭, ২৮২৫১, ৪৪২৪৯ জন, এদের মধ্যে নারী শ্রমিক গেছে যথাক্রমে ৩৪৫৬, ১৪০৮, ৩৫০৩ জন।
সৌদি আরবে নারী পুরুষ নির্বিশেষ দক্ষ অদক্ষ কর্মীর চাহিদা বাড়ছে, অথচ বাংলাদেশ থেকে নারী শ্রমিক রিক্রুট ক্রমাগত কমছে। গালফ নিউজের তথ্য অনুসারে সৌদি আরব ৩৩টি দেশ থেকে নারী কর্মী রিক্রুট করছে।
দীর্ঘ দিন থেকে জনশক্তি রফতানি সেক্টরের সঙ্গে যুক্ত আছেন এবং নারী কর্মী প্রেরণ নিয়ে কাজ করছেন এস এ ট্রেডিং এর স্বত্বাধিকারী আব্দুল আলীম
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে নারী শ্রমিক কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি প্রবাসন নিউজকে বলেন,‘ তারা চায় বলে আমরা কর্মী পাঠাই। তারা এখন চায় না বলে যাচ্ছে না। অত্যন্ত হতদরিদ্র মেয়েরা সেখানে যায় বিনা পয়সায়, তারা গেলে আমরা একটা কমিশন পাই, এটাই আমাদের লাভ। সমস্যা হচ্ছে আমাদের মেয়েরা ওই দেশের জন্য উপযুক্ত নয়, ভাষা জানে না, সেখানকার নিয়ম-কানুন জানে না। যাওয়ার পর সেখানে অনেক ক্ষেত্রে মেয়েদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে না। এসব নানা কারণে সেখানে মেয়েরা টিকে না। এতে আমরা যারা পাঠাই তারা নিরুৎসাহিত হই। উপরন্তু সস্তায় নিতে নিতে তাদেরও অভ্যাস খারাপ হয়ে গেছে।’
সৌদি আরব বিভিন্ন দেশ থেকে নারী শ্রমিক নিচ্ছে, আমদের দেশ থেকে নিচ্ছে না কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,‘ ওই মার্কেট ধরতে হলে আমাদের নিজেদের আপগ্রেড করতে হবে। সৌদি আরব অন্য দেশ থেকে আমাদের থেকে বেশি বেতনে নারী কর্মী নিচ্ছে। আমাদের সমস্যা হচ্ছে গ্রামের একেবারে দরিদ্র মেয়েরা ছাড়া অন্য মেয়েরা যেতে চায় না। শিক্ষিত মেয়েরা অন্য দেশে যায়।’
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে নারী শ্রমিকের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ কি এই নিয়ে প্রবাসন নিউজের সঙ্গে কথা বলেন ইউরোপ ও উন্নত দেশে কর্মী প্রেরণকারী রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সংগঠন রাবিডের কোষাধ্যাক্ষ সৈয়দা পারভীন আক্তার।
তিনি বলেন,‘হাউজ কিপিং কাজে নারী কর্মসংস্থানের সব চাইতে বড় বাজার হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ। মূলত সৌদি আরব, জর্ডান, কাতার ও ওমান আমাদের নারী গৃহকর্মীদের মূল গন্তব্যস্থল। বর্তমানে এই বাজার প্রায় বন্ধের পথে। এর অনেক কারণ আছে। প্রথমত, আমরা ফিলিপাইন, কেনিয়া , ইথিওপিয়া. তাইওয়ান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার কর্মীদের সঙ্গে দক্ষতায় পেরে উঠছি না। পেশাদারিত্বের দিক থেকে আমাদের কর্মীরা পিছিয়ে আছে।
দ্বিতীয়ত, নারী কর্মী পাঠাতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রসেসিং টাইম অনেক বেশি। প্রশিক্ষণের জন্য দুই মাস চলে যায়, এর বাইরে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, স্মাট কার্ড সংগ্রহ প্রভৃতি কাজে আরো এক মাস মোট তিন মাস লেগে যায়।
তৃতীয়ত, খাদ্যাভ্যাস, আবহাওয়া, ভাষা-সংস্কৃতিতে খাপ খাওয়াতে না পারাও একটা সমস্যা। হোম সিকের কারণে অনেকে চুক্তিতে নির্ধারিত সময়ের আগেই দেশে ফিরে আসতে চায়। আমাদের বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমের নেতিবাচক প্রচারণাও এই ক্ষেত্রে একটা ভূমিকা পালন করে।’
তিনি বলেন, ‘এই বাজার ধরে রাখতে হলে কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানো কোন বিকল্প নেই। একই সঙ্গে অভিবাসন ও প্রসেসিং সময় কমাতে হবে এবং দীর্ঘসূত্রিতা দূর করতে হবে।’
আব্দুল আলীম বলেন, ‘নারী অভিবাসীর সংখ্যা বাড়াতে হলে এই মার্কেট থেকে সরে যেতে হবে। আমাদের ইউরোপ ও উন্নত দেশের বাজারের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। যেমন অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ডে প্রচুর চাহিদা আছে, সেখানে কেয়ারগিভারের চাহিদা আছে, বেতনও ভালো, তিন লাখের উপরে। একজন বাংলাদেশের মেয়ে তিন লাখ টাকা সেলারি পেলে আর কি চাই?’
সৈয়দা পারভীন আক্তার বলেন,‘ ইউরোপ ও উন্নত দেশগুলোতে পুরুষদের পাশাপাশি দক্ষ নারী কর্মীর চাহিদা আছে। মধ্যপ্রাচ্যে গৃহকর্মী পাঠানোর যে চিন্তা সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ভাষা শিক্ষা এবং মার্কেটের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ইউরোপ ও উন্নত দেশের বাজারের দিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে।’
ইউরোপের বাজার ধরার জন্য কি ধরনের প্রস্তুতি দরকার এই প্রসঙ্গে আব্দুল আলীম বলেন,‘ কিন্তু মেয়েদের প্রস্তুত করার জন্য আমাদের সেই সাপোর্ট নেই। সরকার সাপোর্ট না দিলে ট্রেনিং দিয়ে মেয়েদের প্রস্তুত করা কঠিন। তিন থেকে চার মাস থেকে নিবিড়ভাবে যে টেনিং নেবে সেই মানসিকতাও আমাদের মেয়েদের নেই। আবার এই তিন চার মাসের খরচ কে দেবে? এই জন্য সাপোর্ট দরকার। যেমন হংকংয়ে সেলারি অনেক বেশি, শুরুতেই এক লাখ টাকা। তবে যাওয়াও অনেক কঠিন, কঠিন এই কারণেই যে, তারা চায় একেবারে দক্ষ। সবচয়ে বড় বিষয় হচ্ছে ভাষা জানতে হয়, চাইনিজ ভাষা শিখাতে হয়। এইসব ক্ষেত্রে অবশ্যই সরকারের ইনভেস্ট করতে হবে। সরকার সাপোর্ট না দিলে মেয়েদের দক্ষ করে তোলা যাবে না।’
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
খোকন দাস
সম্পাদক মন্ডলি
সৈয়দা পারভীন আক্তার
ফকরুদ্দীন কবীর আতিক
মোঃ ইলিয়াস হোসেন
মোঃ শাহাদাত হোসেন
পরিচালক মন্ডলি
ছিদ্দিকুর রহমান ভুঞ্রা (পরিচালক, ফিন্যান্স)
মোস্তাফিজুর রহমান (পরিচালক, পাবলিকেশন)
শান্ত দেব সাহা (পরিচালক, এইচ আর)
শাহরিয়ার হোসেন (পরিচালক, মার্কেটিং)
বার্তা সম্পাদক
মোঃ হাবীবুল্লাহ্
সিনিয়র রিপোর্টার
মোঃ জাকির হোসেন পাটওয়ারী
ভারপ্রাপ্ত প্রকাশক, আরিফুর রহমান কর্তৃক
ডা. নওয়াব আলী টাওয়ার, ২৪ পুরানা পল্টন, ঢাকা থেকে প্রকাশিত।
ফোনঃ +৮৮ ০১৭৩২ ৪১৭ ৫১৭
Email: [email protected]
©২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || ProbasonNews.com