প্রবাসন নিউজ
জনশক্তি প্রেরণ খাতে টিকে থাকতে হলে আন্তর্জাতিক মানের ট্রেনিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা ও কর্মীদের দক্ষ করে গড়ে তোলার বিকল্প নেই। এই ক্ষেত্রে রাবিড যে উদ্যোগ নিয়েছে তা সময়োপযোগী। বৈদেশিক কর্মসংস্থানে ট্রেনিং ও ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টারের ভূমিকা শীর্ষক এক ব্যবসায়ীক সেমিনারে বক্তারা এই কথা বলেন।
বক্তারা বলেন, ‘এই ধরনের উদ্যোগ বায়রারই নেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু বায়রা নেয়নি, তারা নির্বাচন এলে ট্রেনিং সেন্টারের কথা বলেন আর নির্বাচন শেষে ভুলে যান।’ বক্তারা এই সময়োপযোগী উদ্যোগের জন্য রাবিড নেতৃবৃন্দকে স্বাগত জানান। তারা বলেন, ‘একশ্রেণির সিনিয়র নেতার মনোপলির কারণে এই সেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাদের মনোপলি থেকে এই সেক্টরকে বের করে আনতে হবে। রাবিডের এই উদ্যোগের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত হওয়ার অঙ্গীকারের কথাও তুলে ধরেন অনেকে।
রাবিড টেকনিক্যাল ট্রেনিং এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টারের (আর টিটিএলসি) উদ্যোগে ২৮ জানুয়ারি ২০২৫ সন্ধ্যা ৬ টায় হোটেল সাংগ্রিলায় এই বিজনেস সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
দেড় শতাধিক রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন রাবিডের সাধারণ সম্পাদক মো. সিদ্দিকুর রহমান ভূঞা, বিশেষ অতিথি ছিলেন রাবিডের সভাপতি আরিফুর রহমান।
জনশক্তি প্রেরণ খাতের বিভিন্ন দিক নিয়ে বক্তব্য রাখেন মো. শাহরিয়ার হোসেন, খোকন দাস, রেজাউল করিম, মো. সাইকুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম রাজ, মো. ইউসূফ, মো. শাহাদাৎ সুমন, জসিম উদ্দিন পাটোয়ারী, আহম্মদ উল্লাহ বাচ্চু।
আরো বক্তব্য রাখেন সৈয়দা পারভীন আক্তার, গাজী শফিউদ্দিন আহমেদ, কাজী মো. আব্দুর রহিম, ফরিদ আহমেদ ভূঞা, আক্তার হোসাইন, সাজ্জাদ হোসেন খান, মো. ইলিয়াস হোসেন, আবদুল আজিজ প্রমুখ।
আরিফুর রহমান বলেন,‘এখন এক থেকে দেড় কোটি লোক প্রবাসে কাজ করছে, এদের পাঠানো রেমিট্যান্সে অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে। এর পুরো কারিগর হচ্ছে রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা। কিন্তু সেই মর্যাদা আমরা পাই না। এর কারণ কি ?
তিনি বলেন, ‘এখন এয়ার টিকিট নিয়ে, সত্যায়ন নিয়ে জটিলতা হচ্ছে, এই জটিলতায় এজেন্সিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ এই সমস্যায় এজেন্সিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা নয়। সৌদি আরবে, ইউরোপে আমাদের সত্যায়ন লাগে, অথচ অন্যান্য দেশের তা লাগে না। অন্যান্য দেশ ভাষা জানা দক্ষ লোক পাঠায় , আর আমরা অদক্ষ লোক পাঠাই, এই লোকগেুলোর কাজ আছে কি না, ঠিক মতো বেতন দেওয়ার সক্ষমতা আছে কি না, কাজের পরিবেশ আছে কি না এই সব যাচাইয়ের জন্য সত্যায়ন লাগে। আমরা যদি দক্ষ করে, ভাষা শিখিয়ে লোক পাঠাতে পারতাম তা হলে এই সত্যায়নের বিষয় আসতো না।
আর তারা ন্যূনতম টাকায় লোক পাঠায়, বিমান ভাড়াও কোম্পানি দেয়। এই জন্য বিমান ভাড়া নিয়ে এজেন্সিগুলোর ভাবতে হয় না। আমরা দক্ষ লোক পাঠাতে পারলে এই সমস্যায় আমাদের পড়তে হতো না। তাই আজকের এই সমস্যাগুলোর মূলেও রয়েছে অদক্ষ কর্মী পাঠানোর বিষয়।’
তিনি বলেন, এই জন্য আমরা রাবিডের পক্ষ থেকে টেকনিক্যাল ট্রেনিং ও ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা মনে করি, সবাই মিলে দক্ষ লোক তৈরি করবো। তখন সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও উন্নত দেশের কোম্পানিগুলো আমাদের দেশ থেকে দক্ষ কর্মী নেবে। আমাদের বাজার প্রসারিত হবে। আমরা যতো বেশি সংগঠিত হবো ততো বেশি সরকারকে আমাদের সমস্যা বুঝাতে সক্ষম হবো। আমরা বলেছি, শিক্ষা ব্যবস্থায় স্কুল কলেজ থেকে ইংরেজিসহ একাধিক ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। এটা কেবল আমাদের ব্যবসায়ীক ইস্যু নয়, জনশক্তি প্রেরণ সেক্টর দেশের অর্থনীতির ইতিহাস পাল্টে দেবে। এর জন্য কেবল আমাদেরকে ব্যবসার ধরন পাল্টে দিতে হবে, দক্ষ কর্মী প্রেরণের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। ’
জসিম উদ্দিন পাটোয়ারী রাবিডকে এই উদ্যোগ গ্রহণের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘ভবিষ্যতে এই ধরনের প্রতিষ্ঠান ছাড়া ব্যবসা হবে না। বায়রারই এই ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা ছিল, বায়রার নেতৃত্ব অকার্যকর। তারা সৌদি আরবের সমস্যা নিয়ে উদ্যোগ নিচ্ছেন না, এয়ার টিকিট নিয়ে কোন কথা বলছেন না। নির্বাচন এলে তারা গাজিপুরের ট্রেনিং সেন্টারের কথা বলেন, নির্বাচন গেলে তা ভুলে যান।’ তিনি রাবিডের এই উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার ঘোষণা দেন এবং নতুন আর এল মালিকদের রাবিডে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।
আহম্মদ উল্লাহ বাচ্চু বলেন, ‘এই সেক্টরের সিনিয়ররা চায় না, আমরা এগিয়ে যাই। তাদের মনোপলির কারণে এই সেক্টরের এই দুরবস্থা। আজকে টিকিটের জন্য হাহাকার। এখানে কালোবাজারী কারা? হাতে গোনা কয়েক জন, এয়ারলাইন্সের একটা চক্রকে সাথে নিয়ে একটা গ্রুপ তৈরি করে এই সমস্যার সৃষ্টি করেছে। এগুলো দূর করতে হবে। বায়রার এই বিষয় নিয়ে কোন তৎপরতা নেই।
গাজীপুরে ৫.৩৮ একর জমি আছে ট্রেনিং সেন্টারের জন্য, কিন্তু ফালাফল জিরো, নির্বাচন এলে স্বপ্ন দেখানো হয়। আমরা বায়রায় টাকা দিচ্ছি সেই টাকা কথা বলেছে না।’
সাজ্জাদ হোসেন খান বলেন, ‘আজকে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে নিয়ে টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের ভূমিকা নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে এই ধরনের কাজ করার কথা বায়রার, কিন্তু বায়রা তার কিছুই করছে না। টিটিসি সারা দেশে তিন দিনের যে ট্রেনিং দিচ্ছে আমি মনে করি তা আমাদের আরো ক্ষতি করছে। দুই ঘন্টা করে তিন দিনে একটা কর্মীকে কি শিখানো যায়? নাম মাত্র ট্রেনিং নিয়ে বিদেশ গিয়ে কর্মীরা কিছু পারে না, এতে মার্কেটটা আরো নষ্ট হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘ইউরোপের বাজার সৃষ্টির সুযোগ হয়েছে, আমরা এই মার্কেট নষ্ট হতে দেব না।’
ফরিদ আহমেদ ভূঞা বলেন, ‘ আমাদের শিক্ষার বড় সমস্যা হচ্ছে কোয়ালিটির সমস্যা, সার্টিফিকেটের জ্ঞানের সঙ্গে বাস্তব জগতের জ্ঞানের কোন মিল নাই। তাই কর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে শিক্ষা দিতে হবে। এইজন্য আমাদের ট্রেনিং সেন্টার দরকার। সঠিকভাবে দক্ষ করে পাঠাতে পারলে এখন যে রেমিট্যান্স পাচ্ছি তার পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যাবে। অন্যরা কম কর্মী পাঠিয়ে বেশি রেমিট্যান্স পায় আর আমরা বেশি লোক পাঠিয়ে কম রেমিট্যান্স পাই।’
গাজী শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন,‘ ৪০/৪৫ বছর থেকে লোক পাঠাচ্ছি, এখন কোন কোম্পানি অদক্ষ লোক চায় না। বায়রা নির্বাচনের সময় স্বপ্ন দেখালেও এই ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেয় না। সরকারের বিভিন্ন ট্রেনিং সেন্টার আছে, সেগুলো অর্থহীন। এই রকম পরিস্থিতিতে রাবিড যে উদ্যোগ নিয়েছে তা ভালো উদ্যোগ।’
কাজী মো. আব্দুর রহিম বলেন, ‘এই ধরনের উদ্যোগ আরো আগেই আমাদের নেওয়া দরকার ছিল, রাবিড করেছে এই জন্য রাবিড নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ। আমরা ৮৪টা লাইসেন্সধারী জাপানি ল্যাঙ্গুয়েজ শেখায়, কতো ধরনের সমস্যা আমাদের মোকাবেলা করতে হয়। স্টুডেন্টদের বাসা ভাড়া দেয় না। ছোট একটা রুমে ৭/৮ ঘন্টা ক্লাস নিতে হয়। এইসব সমস্যা সম্মিলিতভাবে মোকাবেলা করতে হবে।’
আক্তার হোসেন বলেন, ‘মালয়েশিয়া গার্ড নিতে গেলে নেপালের লোক নেয়, কারণ নেপাল এই বিষয়ে দক্ষতা তৈরি করেছে। আমাদের ছেলেদের আন্তরিকতা আছে, কাজেও ভালো, কিন্তু তাদেরকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।’
সৈয়দা পারভীন আক্তার বলেন,‘আমাদের মধ্যে যারা প্রথম সারির ব্যবসায়ী তাদের প্রত্যেকের টেনিং সেন্টার আছে, তারা কখনোই ট্রেনিং সেন্টারের বিষয়ে আমাদের উৎসাহ দেয় না। আমাদের অস্থিত্বের প্রয়োজনে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা তিল তিল করে এই টেনিং সেন্টার গড়ে তুলেছি, আমরা সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।’
সাপ্তাহিক প্রবাসন পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খোকন দাস বলেন,‘আমাদের বড় শ্রমবাজার সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো দক্ষ শ্রমিকের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। আর দক্ষতা ছাড়া ইউরোপের বাজার ধরার কোন সুযোগ নেই। এই বাজারের উপযুক্ত করে দক্ষ কর্মী তৈরি করতে না পারলে আমাদের জন্য খরাপ সময় অপেক্ষা করছে।’
মো. ছিদ্দিকুর রহমান ভূঞা বলেন,‘ রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স নবায়ন করতে হলে ট্রেনিং সেন্টার থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অথচ আমাদের অনেকের পক্ষে ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন সম্ভব নয়, তাই আমরা রাবিডের পক্ষ থেকে টেকনিক্যাল ট্রেনিং ও ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি।’ এই উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য তিনি এজেন্সির মালিকদের আহ্বান জানান।
মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন আরটিটিএলসির কার্যক্রম, বিশিষ্টতা, মিশন ও ভিশন তুলে ধরে একটি সংক্ষিপ্ত প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। এতে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের বিশিষ্টতা, কোন কোন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, দক্ষ হয়ে কর্মীরা কোন দেশে যাচ্ছে, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রভৃতি বিষয় প্রজেক্টরে তুলে ধরেন।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
খোকন দাস
সম্পাদক মন্ডলি
সৈয়দা পারভীন আক্তার
ফকরুদ্দীন কবীর আতিক
মোঃ ইলিয়াস হোসেন
মোঃ শাহাদাত হোসেন
পরিচালক মন্ডলি
ছিদ্দিকুর রহমান ভুঞ্রা (পরিচালক, ফিন্যান্স)
মোস্তাফিজুর রহমান (পরিচালক, পাবলিকেশন)
শান্ত দেব সাহা (পরিচালক, এইচ আর)
শাহরিয়ার হোসেন (পরিচালক, মার্কেটিং)
বার্তা সম্পাদক
মোঃ হাবীবুল্লাহ্
সিনিয়র রিপোর্টার
মোঃ জাকির হোসেন পাটওয়ারী
ভারপ্রাপ্ত প্রকাশক, আরিফুর রহমান কর্তৃক
ডা. নওয়াব আলী টাওয়ার, ২৪ পুরানা পল্টন, ঢাকা থেকে প্রকাশিত।
ফোনঃ +৮৮ ০১৭৩২ ৪১৭ ৫১৭
Email: [email protected]
©২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || ProbasonNews.com